হাসান মামুন: শীতলপাটি বাংলার এক চিরায়ত কুটিরশিল্প যা আমাদের সভ্যতা, কৃষ্টি এবং ঐতিহ্যের অংশ। গ্রীষ্মকালে এর শীতল পরশ এবং বর্ণিল নকশা প্রাচীনকাল থেকে মানুষকে মুগ্ধ করেছে। তবে আধুনিকতার স্পর্শে এবং বিভিন্ন প্রতিকূলতার কারণে শীতলপাটির ঐতিহ্য আজ সংকটের মুখে।
সংকট ও বর্তমান পরিস্থিতি: পিরোজপুরের কাউখালীর সুবিদপুর গ্রামের প্রায় ৫০টি পরিবারের সদস্যরা শীতলপাটি শিল্পের সাথে জড়িত। তাদের জীবিকার প্রধান মাধ্যম এটি হলেও বর্তমানে তারা আর্থিক দুর্দশায় দিন কাটাচ্ছেন। পাইত্রা (পাটি তৈরির প্রধান কাঁচামাল) অপ্রতুল এবং দামের ঊর্ধ্বগতির কারণে শীতলপাটি তৈরির খরচ বেড়ে গেছে। আগে যেখানে এক পন পাইত্রা পাওয়া যেত ৫০ টাকায়, এখন তার দাম ২৫০-৩০০ টাকার মতো।
উপকরণের সংকট এবং মানবেতর জীবনযাপন: শীতলপাটির শিল্পীরা তাদের পূর্বপুরুষের পেশা ধরে রেখেও ভীষণ সমস্যার সম্মুখীন। বাজারে ন্যায্য মূল্যের অভাব, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি এবং ক্রেতার কমতির কারণে এই পরিবারগুলো চরম আর্থিক কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। পাইত্রার অভাব এবং বন ধ্বংসের ফলে পাটির কদর দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে।
উন্নতির সম্ভাবনা এবং দাবি: শীতলপাটি শিল্পের উন্নয়ন এবং বিপর্যয় থেকে রক্ষা পেতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অত্যন্ত জরুরি। প্রশিক্ষণ ও সহজ শর্তে ঋণ দিলে এই শিল্পের সম্ভাবনাময় বিকাশ হতে পারে। সঠিক ব্যবস্থাপনায় এই শিল্প থেকে প্রতি বছর কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতামত: সুবিদপুরের ঐতিহ্যবাহী শীতলপাটি শিল্পকে বাঁচাতে স্থানীয় চেয়ারম্যান এবং বিসিক কর্মকর্তারা সরকারি সহযোগিতা ও ব্যাংক ঋণের দাবি জানিয়েছেন। তাদের মতে, রাজধানীতে একটি শো-রুম তৈরি করা হলে এ শিল্প বহির্বিশ্বে পরিচিতি পাবে এবং আর্থিকভাবে লাভবান হবে।
উপসংহার: একসময় বাংলাদেশের ঘরে ঘরে ব্যবহৃত শীতলপাটি আজ বিলুপ্তির পথে। তবে সঠিক পরিকল্পনা এবং সহযোগিতার মাধ্যমে এই শিল্পের ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ এবং বিপর্যস্ত পরিবারগুলোর জীবিকা ফিরিয়ে আনা সম্ভব।