বিএনএসঃ হাজারো সাংবাদিকের গুরুজন, কিংবদন্তি সাংবাদিক মুহাম্মদ আলতাফ হোসেন সাংবাদিকতা নিয়ে একটি স্বপ্ন দেখেছিলেন। যুগের পর যুগ পেরিয়ে গেলেও তা পূরণ হয়নি। আজ তিনি বেঁচে নেই, কিন্তু তার পদধনী রয়ে গেছে তার নিজ হাতে গড়া হাজারো সংবাদকর্মীর মাঝে। মুহম্মদ আলতাফ হোসেন প্রশ্ন করে বলেছিলেন, একজন আইনজীবীকে যদি বার কাউন্সিল সনদ গ্রহণ করে পেশা শুরু করতে হয়, একজন চিকিৎসককে যদি মেডিকেল ও ডেন্টাল কাউন্সিলের সনদ নিয়ে কাজ করতে হয়, তাহলে একজন সাংবাদিককে কেন বাংলাদেশ প্রেস কাউন্সিল থেকে সনদ গ্রহণ করতে হবে না ?
আইন পেশা, চিকিৎসা পেশা তো সর্বকালেই একটি মহৎ পেশা। সাংবাদিকতাও একটি মহৎ পেশা। অতএব তফাতটা কোথায়? দেশে সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে কেন সনদ প্রবর্তন করা হবে না?
বর্তমান সময়ে যেভাবে সাংবাদিককতার বিকাশে ঘটেছে এটা একটা শুভ লক্ষণ। কিন্তু পরিশীলিত বিন্যাস, সুনির্দিষ্ট বিধি, পেশাগত মানোন্নয়ন ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করে বিকাশ কতটুকু সাধিত হয়েছে বা হচ্ছে তা খতিয়ে দেখার প্রয়োজন।
আমাদের দেশে সব সাংবাদিক যে জার্নালিজমে অনার্স-মাস্টারস করে সাংবাদিকতায় আসছেন তা কিন্তু নয়। এমনকি বেশির ভাগ সাংবাদিকই যে ন্যূনতম মাস্টার্স-গ্রাজুয়েশন কিংবা ইন্টার করে এসেছেন তাও কিন্তু সঠিক নয়। বরং বলা যায় এস,এস,সি কিংবা নাইন-টেন পর্যন্ত পড়াশুনা করেও অনেকে দতার সাথে সাংবাদিকতা করছেন। তার মধ্যে প্রাইমারী লেভেল মাত্র পড়েছেন এমনও অনেকে আছেন বলেও শোনা যায়। কিন্তু এদের মধ্যে অনেকেই ভালো পত্রিকার সাথে ভালো ভাবেই সাংবাদিকতা করে সুনাম অর্জন করেছেন। দীর্ঘ অভিজ্ঞতাও হয়তো অনেকের আছে। কিন্তু এভাবে দক্ষ হওয়া এক কথা, আর প্রাথমিক ন্যূনতম জ্ঞান নিয়ে এ পেশায় আসা ভিন্ন কথা। দুটোর মধ্যে কিন্তু ফারাক থেকেই যাচ্ছে।
মানসম্পন্ন সাংবাদিকতায় আসতে হলে ন্যূনতম ধারণা নিয়েই আসতে হবে। এ বিষয়টি মাথায় রাখলেই প্রয়োজন একটি সনদপত্র। আর এ সনদপত্রটি দিতে পারে প্রেস কাউন্সিল। এজন্যে প্রয়োজন হলে প্রেস কাউন্সিলকে বিকেন্দ্রীকরণ করা যেতে পরে। জেলায় জেলায় না হলেও প্রাথমিকভাবে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রেস কাউন্সিল থাকাটাও বাঞ্ছনীয়। এতে সাংবাদিকদের সনদ গ্রহণ হবে সহজতর।
তাই বিষয়টি নিয়ে প্রেস কাউন্সিলেরই উদ্যোগী হওয়া দরকার। দেশের খ্যাতিমান সাংবাদিক নেতৃত্বের পরামর্শ, উপদেশ ও দিক-নির্দেশনা নিয়ে যথাশীঘ্র সম্ভব বিষয়টির সুরাহা করা প্রয়োজন। সুস্থ ও সমৃদ্ধ সাংবাদিকতার স্বার্থে সরকারও এ ব্যাপারে সহায়তার হাত বাড়াতে পারে।
মরহুম মুহাম্মদ আলতাফ হোসেনের এই স্বপ্নটি যেন আজ বড়ই সমসাময়িক। যত দ্রুত এই কাজটি সম্পন্ন করা যাবে তত দ্রুত সমাজের দর্পণখ্যাত এই মিডিয়াঙ্গণ দেশ প্রেম, জবাবদিহিতা ও পরিচ্ছন্নতায় শতভাগ সমৃদ্ধ হবে।
লেখক:
মোঃ মামুন-অর-রশিদ
ব্যুরো প্রধান, দৈনিক বর্তমান।
সম্পাদক ও প্রকাশক, বরিশাল বাণী।
যুগ্ম মহাসচিব, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা।
মোবা: 01712765308




