বিএনএসঃ সাংবাদিকদের জীবনের ঝুঁকি: কোথায় নিরাপত্তা
সাংবাদিকতা পেশাটি কখনোই কেবল কলম আর ক্যামেরার খেলা নয়। এটি সত্যের সন্ধানে নেমে পড়া এক বিপজ্জনক অভিযাত্রা, যেখানে জীবন আর নিরাপত্তার মাঝে এক অদৃশ্য সূক্ষ্ম রেখা বিদ্যমান। বিশেষ করে রাজনৈতিক অস্থিরতা, দুর্নীতি, মানবাধিকার লঙ্ঘন কিংবা সংঘাতপূর্ণ এলাকায় রিপোর্টিং করতে গিয়ে সাংবাদিকরা পড়েন মারাত্মক ঝুঁকির মুখে।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশে সাংবাদিক নির্যাতন, গুম, হত্যা কিংবা মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছেন বারবার। কখনো রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তি, কখনো রাজনৈতিক গোষ্ঠী আবার কখনো প্রভাবশালী মাফিয়াচক্রের রোষানলে পড়ে নিভে যায় একজন সত্য অনুসন্ধানকারীর জীবন। অথচ, সংবিধানে থাকা মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা বাস্তব প্রয়োগে প্রায়শই অনুপস্থিত।
আন্তর্জাতিক বিভিন্ন রিপোর্ট অনুযায়ী, প্রতি বছরই বহু সাংবাদিক হত্যা বা নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা ঘটে এবং দুঃখজনক হলেও সত্য—তাদের অধিকাংশ হত্যাকাণ্ডের বিচার আজও অধরা। এমন বাস্তবতায় প্রশ্ন ওঠে: সাংবাদিকদের নিরাপত্তা কে দেবে?
একটি গণতান্ত্রিক সমাজে সাংবাদিকদের কাজ হচ্ছে সমাজের আয়না ধরে রাখা—যেখানে অন্যায়, দুর্নীতি কিংবা অবিচারের প্রতিফলন দেখা যায় স্পষ্টভাবে। অথচ এই আয়নাধারীরাই যদি হয় সবচেয়ে অরক্ষিত, তাহলে সেই সমাজের স্বচ্ছতা কিভাবে বজায় থাকবে?
সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, মিডিয়া মালিকগণ এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়—সবার উচিত সাংবাদিকদের সুরক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা। বিশেষ আইন, সুরক্ষা প্রটোকল এবং নিরপেক্ষ তদন্ত ব্যবস্থার নিশ্চয়তা দিতে হবে।
আজ সময় এসেছে প্রশ্ন তোলার—সত্য প্রকাশের জন্য জীবন উৎসর্গ করতে হবে কেন? একজন সাংবাদিকের কলম বন্ধ করে দেওয়া মানে একটি সমাজের চোখ বন্ধ করে দেওয়া। সুতরাং, যদি আমরা সত্য, ন্যায় ও মানবিকতা রক্ষা করতে চাই, তবে সাংবাদিকদের জন্য একটি নিরাপদ, স্বাধীন এবং মর্যাদাপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতেই হবে।
লেখকঃ মোঃ রাব্বী মোল্লা (সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী)