ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধি :
ঠাকুরগাঁওয়ে ফেসবুক প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিলন হোসেন (২৩) নামের এক যুবককে অপহরণ করেছে একটি চক্র। তবে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা দিয়েও কলেজ পড়ুয়া ছেলেকে ফিরে পায়নি ভুক্তভোগী কৃষক পরিবার। অপহৃত মিলন দিনাজপুর পলিটেকনিক কলেজের ছাত্র।
রবিবার (৯ মার্চ) রাতে মুক্তিপণের ২৫ লাখ টাকা অপহরণকারী চক্রের কাছে বুঝিয়ে দেয় অপহৃত মিলনের পিতা পানজাব আলী। তিনি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার খনগাঁও এর চাপাপাড়া এলাকার বাসিন্দা।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে মিলনকে অপহরণ করে একটি চক্র। কার সাথে প্রেমের সম্পর্ক পরিবার তা জানে না। কোনো দিন ছেলে তাদের পরিচয়ও দেয়নি।
এর আগে ২৩ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৮টার দিকে ঠাকুরগাঁও পলিটেকনিকের পিছনে প্রেমিকার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েই নিখোঁজ হন মিলন। ঘটনার দিন রাত ১টার থেকে ভুক্তভোগী পরিবারকে মুঠোফোনে অপহরণের বিষয়টি জানায় অপহরণকারীরা। প্রথমে ১২ ঘণ্টার মধ্যেই মুক্তিপণের ৩ লাখ টাকা চায় অপহরণকারীরা। পর দিন দুপুরে ৩ লাখ টাকা দিতে রাজি হয় মিলনের পরিবার। তবে পরে চক্রটি ৫ লাখ দাবি করে। পরদিন আরও বেড়ে ১০ লাখ হয়। তিন দিন পরে ১৫ লাখ চায় চক্রটি। সবশেষে ২৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে অপহরণকারী চক্র।
অপহরণকারীরা যখন যত টাকাই চেয়েছে তা দিতে রাজি ছিল ভুক্তভোগী পরিবারটি। তবে বিভিন্ন সময় টাকার পরিমাণ বাড়িয়ে মুক্তিপণের বিনিময়ে ঘটনাটি দীর্ঘ করেছে অপহরণকারীরা।
সবশেষ রবিবার রাতে ঠাকুরগাঁও থেকে ঢাকাগামী ১০টার ট্রেন উঠতে বলে অপহরণকারীরা। এর পর জেলার পীরগঞ্জের সেনুয়া নামক স্থানে চলন্ত ট্রেন থেকে ২৫ লাখ টাকার ব্যাগটি বাইরে ফেলে দিতে বলে চক্রটি। মিলনের জন্যে দুই সেট গায়ের পোশাকসহ টাকাগুলো ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার কয়েক মিনিট পর টাকা পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে অপহরণকারীরা। এর পর দিনাজপুর রেলওয়ে স্টেশনে অপহৃত মিলনকে পাওয়া যাবে বলে তথ্য দেয় অপহরণকারী চক্রটি। স্টেশনে গিয়ে সম্পূর্ণ স্টেশন তন্নতন্ন করে খুঁজাখুঁজি করা হয়। এ দিন রাত ১১টা থেকে সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেও ছেলে মিলনের দেখা পায়নি পরিবারটি।
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুর রহমান বলেন, ‘অপহরণের ঘটনাটি ঘটার পর দিন মৌখিকভাবে পুলিশকে জানায় মিলনের পরিবার। তখন থেকেই চক্রটিকে ধরার জন্যে কাজ করছিল পুলিশ। তবে তদন্ত কাজে মিলনের পরিবারের কাছ থেকে তেমন সহযোগিতা পাইনি আমরা। সবশেষ ৫ মার্চ ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে মিলনের পিতা পানজাব আলী। এর পর থেকে পুলিশের সাথে পানজাব আলী আর কোনো প্রকার যোগাযোগ রাখেনি। সেই সঙ্গে অপহরণকারীদের ২৫ লাখ টাকা লেনদেনের বিষয়টি তারা পুলিশের কাছে গোপন রেখেছে।
পরিবার সূত্রে আরও জানা গেছে, তাদের ছেলে অপহরণের পর প্রথমে ঠাকুরগাঁও সদর থানায় মৌখিকভাবে বিষয়টি জানায়। পরে ৫ মার্চ একটি জিডি করে পরিবার। তবে ছেলেকে মেরে ফেলবে এমন ভয়ে পুলিশের দারস্থ হয়নি ভুক্তভোগী পরিবার।