বিএনএসঃ
সাংবাদিকতা এক সময় ছিল কাগজ, কলম আর খবরের কাগজের গল্প। অথচ আজ, একবিংশ শতাব্দীতে দাঁড়িয়ে আমরা যখন সাংবাদিকতার কথা বলি, তখন সেখানে যুক্ত হয়েছে প্রযুক্তি, সোশ্যাল মিডিয়া, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI), এবং তথ্যের ঝড়। এককথায়, সাংবাদিকতা বদলে গেছে — এবং এই পরিবর্তন শুধু পদ্ধতিতে নয়, দৃষ্টিভঙ্গিতেও।
পরিবর্তনের হাওয়াঃ
আগে যেখানে খবর ছাপা হতো পরদিন সকালে, এখন তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে ফেসবুক, টুইটার বা ইউটিউবের মতো প্ল্যাটফর্মে। লাইভ ব্রডকাস্ট, রিয়েল-টাইম আপডেট, ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিং — এই সবই এখন সাংবাদিকতার নিত্যসঙ্গী। কিন্তু এই পরিবর্তনের সঙ্গে এসেছে ভুয়ো খবর, ট্রল, তথ্য বিকৃতি এবং বিশ্বাসযোগ্যতা সংকট।
সাংবাদিকতার চ্যালেঞ্জঃ
আজকের সাংবাদিকের ভূমিকা শুধুই খবর পরিবেশন নয় — বরং সত্য যাচাই, মতামত বিশ্লেষণ, এবং দায়িত্বশীলতা রক্ষা করাও তার কাজ। তথাপি, অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে প্রযুক্তির দাপটে মৌলিক সাংবাদিকতা কোণঠাসা হয়ে পড়ছে।
আরেকটি বড় প্রশ্ন — কতটা প্রস্তুত আমরা?
প্রযুক্তি দ্রুত বদলাচ্ছে, কিন্তু তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার জন্য কি আমাদের সাংবাদিকরা, সংবাদমাধ্যমগুলো বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তুত?
কী করা দরকার?
১. ডিজিটাল স্কিল: সাংবাদিকদের এখন ভিডিও এডিটিং, সোশ্যাল মিডিয়া এনালাইটিক্স, ডেটা জার্নালিজম — এসব শেখা বাধ্যতামূলক।
২. গভীরতা ও নির্ভুলতা: যত দ্রুত সংবাদ পরিবেশন হোক না কেন, তথ্য যাচাই ছাড়া খবর প্রকাশে প্রতিযোগিতা যেন না হয়।
৩. সাংবাদিকতার নৈতিকতা: ক্লিকবাইট বা ভাইরাল হবার লোভে যেন সংবাদ তার মুল্যবোধ হারিয়ে না ফেলে।
- নতুন প্রজন্মকে প্রস্তুত করা: সাংবাদিকতা শিক্ষায় চাই কারিগরি দক্ষতা ও চিন্তাশীলতা — যাতে তারা ভবিষ্যতের গণমাধ্যম নেতৃত্ব দিতে পারে।
উপসংহারঃ
যুগ বদলেছে — এটা অনস্বীকার্য। কিন্তু এই বদলে যাওয়া সময়ে সাংবাদিকতাকে রক্ষা করতে হলে প্রয়োজন অভিযোজন, দায়বদ্ধতা ও সাহস। কেবল প্রযুক্তি নয়, সত্যের প্রতি দায়বদ্ধতাই হতে হবে সাংবাদিকতার মূল চালিকাশক্তি।
প্রশ্ন তাই থেকেই যায় — আমরা কি সত্যিই প্রস্তুত?
লেখকঃ মোঃ রাব্বী মোল্লা
(সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী)