জীবনে সময় ব্যবস্থাপনা

বিএনএসঃ

জীবনে সময় ব্যবস্থাপনা

আমাদের বোধশক্তি যখন সচেতন হবে, চিন্তার পরিধি বেড়ে যাবে তখন সময়কে বুঝা সহজ হবে। এটা আমাদের মন, মস্তিষ্কে সচেতনভাবে প্রতিফলন ঘটাতে হবে। আমাদের জীবনে সময়ের গুরুত্ব কতটুকু আর সেভাবে আমরা কাজ করতে পারছি কিনা, তা বুঝার চেষ্টা করতে হবে। আমাদের কাছে জীবন যতটা গুরুত্ববহ, সময়কে মূল্যায়ন করে অর্থবহ কাজ করার মধ্যে তার প্রতিফলন স্পষ্ট হবে। মানুষের জীবনের  ক্ষুদ্র পরিসরকে যদি যর্থাথভাবে মূল্যায়ণ করা যায়, তবে সভ্যতার অভূতপূর্ব বিকাশ অনিবার্য। বর্তমান সময়ে তা আরো বেশি অর্থবহ। আজ বিজ্ঞান সময়ের ন্যানো সেকেন্ডের হিসাবে চলে। দ্রুতগামী ট্রেন, বিমানের সাহায্যে ধারণাতীত কম সময়ে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় যাওয়া যায়।  একটা ক্ষুদ্র ‘এটম বোমের’ দ্বারা মূহূর্তেই কোনো নগরী, শহর ধ্বংস করা হচ্ছে। সামান্য সময়ের ব্যবধানে একটা দেশ মৃত্যুপুরীতে পরিণত হচ্ছে। এভাবে সময়ের হিসাব খুব দ্রুত হচ্ছে। আর এই সময় মানুষের জীবনের নানামুখি চাহিদাও বাড়ছে প্রতিক্ষণেই। তাই আমাদের জীবনে সময় কতটা মূল্যবান এ থেকেই অনুমান করা যায়।আমরা যদি সময়কে মূল্যায়ণ না করি, তবে সমূহ ক্ষতির মধ্যে পড়বো। যার শুরু হবে শৈশব কাল থেকে। এরপর জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে। ছাত্র জীবনে অবহেলা জীবনের অন্য ধাপগুলোতে পরবে। ফলাফল হবে খারাপ। এরপর তার জন্য ভালো কর্মের অভাব, ফলে সংসারে টানাপোড়েন, শেষ পরিণতি অশান্তি নিত্য সঙ্গি, এভাবে চক্রাকারে জীবনের এক ধাপ থেকে অন্য ধাপে। এক সমস্যা থেকে নতুন সমস্যার তৈরী। তাই এই সময়কে মূল্যায়ণ করার অর্থ হলো কল্যাণমূলক কাজের মধ্য দিয়ে জীবনকে সার্থক করে তোলা। তবে যদি আমরা আমাদের জীবনের অর্থ বুঝি তখন তা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়বে।আর এই অর্থ বোঝাটা হলো আমার জীবনের এই মহামূল্যবান সময়কে; কি কি কাজে ব্যবহার করলাম তার হিসাব রাখা। যদি তা না রাখি তবে আমিও ক্ষতির মধ্যে নিপতিত হবো। আমি মানুষ হিসাবে জন্ম লাভ করলাম, পরিবারে বড় হলাম, তারপর নিজের পরিবার হলো, এক সময় বৃদ্ধ হলাম, মারা গেলাম, জীবনের পরিসমাপ্তি হলো। এটাই কি আমার জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য? নাকি আরো কোনো মহৎ চিন্তার, মহৎ কর্মের, মহৎ সৃজনশীলতার জন্য আমাকে সৃষ্টি করা হয়েছে? যা পৃথিবীকে আরো বেশি সুন্দর করার নিয়ামক। আর এর বিপরীত যদি হয় তবে তো তা অন্যান্য সৃষ্টি, গরু, ছাগল, গাধা, ঘোড়া হাতি তাদের জীবনের চেয়ে আলাদা কিছু নয়। কারণ খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকার নামই জীবন নয়। জীবনের প্রকৃত অর্থ হবে স্রষ্টা কর্তৃক হুকুমগুলো যথাযথভাবে পালনের চেষ্টা। যেহেতু স্রষ্টা আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন, তাই তার ‘ইবাদতের মধ্য দিয়ে জীবন অতিবাহিত করা। আর এই ‘ইবাদত জীবনের প্রতিটি মূহূর্তেই আদায় করা সম্ভব যদি সেখানে আল্লাহ ও তার রাসূলের নির্দেশনার অনুসরণ থাকে।এই নির্দেশনা মানুষের ঘুম থেকে উঠে ঘুমাতে যাওয়া পর্যন্ত সকল কাজের মধ্যে সমানভাবে পরিলক্ষিত হয়। শুধু আমরা সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের চেষ্টা করবো। ঘুম থেকে উঠার দু‘আ, যেকোনো কাজের শুরুতে বিস্মিল্লাহ বলে শুরু করা, প্রয়োজনীয় স্থানে দু‘আ-ইস্তিগফার পাঠ, সামাজিক আচার-আচরনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছ থাকা, সময়ের কাজগুলো সময় মতোই সম্পন্ন করা; এটাই সময়ের যথার্থ মূল্যায়ণ। যদিও বিষয়গুলো খুব সাধারণ ও সহজ বলে মনে হয়। কিন্তু নিয়মিত ও সঠিক সময়ে সঠিক স্থলে নিয়মানুযায়ী পালন করা কিন্তু খুব একটা সহজ নয়। তবে যারা অনুশীলন অব্যাহত রাখে এ ক্ষেত্রে তারাই সফলকাম।আর এটাও মনে রাখতে হবে যে, এ হুকুম আমার মহান রবের পক্ষ থেকেও নির্ধারিত। এমনকি পাঁচ ওয়াক্ত নামাযও আমরা নির্ধারিত সময়ে আদায় করি। এজন্য মৃত্যু নামক এক অনিবার্য বাস্তবতার মুখোমুখি হবার আগেই আমাদেরকে সর্তক হতে হবে। জীবনকে কী কী কাজে ব্যবহার করেছি, কতটা অর্থবহ করেছি তাই এখানে বিচার করতে হবে। কেননা মৃত্যু একবার গ্রাস করলে বাড়তি কোনো সময় পাওয়া যাবে না। যেহেতু মৃত্যুর মধ্য দিয়েই জীবনের পরিসমাপ্তি নয়; বরং দুনিয়ার জীবনে আমি কতটা অন্যায় করেছিলাম, ভালো করেছিলাম তার প্রতিফল না পেয়েই মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জীবনের পরিসমাপ্তি হবে, এটা একটা অবান্তর চিন্তা। জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বিশিষ্ট-প্রবীণ সাংবাদিক ও কলামিস্ট মুহম্মদ আলতাফ হোসেন