লক্ষ্মীপুরে নিজস্ব তহবিল থেকে ১১৭টি গভীর নলকূপের সরকারি ফি পরিশোধ করলেন এমপি নয়ন

আহসান হাবীব,স্টাফ রিপোর্টারঃ 
যেকোন জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মানুষের বিরূপ মন্তব্য পরিলক্ষিত হয় সচরাচর। জনপ্রতিনিধি মানেই যেনো কথার বরখেলাপ কারি। কিন্তু লক্ষ্মীপুর-২ আসনের নবনির্বাচিত সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন এর ক্ষেত্রে তা বিপরীত দেখা যাচ্ছে। সম্প্রতি উপ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হওয়ার পরপরই তার ব্যাতিক্রমী এক সেবায় ওই নির্বাচনী এলাকার জনগণ ব্যাপক মুগ্ধতা প্রকাশ করেছেন।
এমপি হিসেবে নিজের নির্বাচনী এলাকার জন্য প্রথমবারের মতো বরাদ্দপ্রাপ্তির ১১৭টি গভীর নলকূপ বিতরণে তিনি অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। নিয়ম অনুযায়ী ১১৭ জন উপকারভোগীর প্রত্যেকে ৭ হাজার টাকা করে নামমাত্র সরকারি ফি জমা দেয়ার কথা থাকলেও তিনি তা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে বিতরণ করেছেন। এর বিপরীতে তিনি ৭ হাজার টাকা করে ১১৭ জনের মোট হিসেবে ৮ লাখ ১৯ হাজার টাকা ব্যাক্তিগত এ্যাকাউন্ট থেকে সরকারি কোষাগারে পরিশোধ করেছেন।
গভীর নলকূপ স্থাপনের স্থানীয় বাস্তবায়ন সংস্থা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর- লক্ষ্মীপুর এর নির্বাহী প্রকৌশলীর অনুকূলে বৃহস্পতিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) এমপি নয়ন ব্যাক্তিগত এ্যাকাউন্টের চেকের মাধ্যমে তা জমা দেন।
এইদিনই জমাকৃত চেকের একটি ফটোগ্রাফি তিনি নিজের ফেসবুক পেজে বর্ণনাসহ পোস্ট করলে শুভার্থীদের ইতিবাচক অসংখ্য মতামত সমেত এটি ভাইরাল হয়ে যায়।
তানভির হায়দার রিংকু নামের একজন কমেন্টে বলেন, জনগণকে দেয়া নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি রাখলেন এমপি নয়ন। জনসেবায় তিনি নব দিগন্তের সূচনা করলেন। নাজমুল সুমন নামের আরেকজন এমপিকে উদ্দেশ্য করে লিখলেন, ডেডিকেটেড ফর মাচ পিপল, স্যালুট..।
কামরুল হাসান রাসেল নামের একজন কমেন্ট করেন, ধন্যবাদ লক্ষীপুর-২ আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য অ্যাড. নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন। এই প্রথম কোন এমপি নিজ সংসদীয় এলাকায় সরকারি বরাদ্দ কৃত গভীর নলকূপ এর সরকারি ফি নিজস্ব অর্থায়নে পরিশোধ করে জনগণের পানির ব্যবস্থা করলেন।
সৈয়দ বাপ্পী কমেন্ট করে লেখেন, সদর (আংশিক) এবং রায়পুর উপজেলা বাসী কে কথা দিয়ে কথা রাখলেন এমপি মহোদয়। সফলতা কামনা করি।
অপরদিকে জেলার অন্য আসনের বাসিন্দা অনেকেই আক্ষেপ করে কমেন্টে জানান, তাদের ভাগ্য খারাপ তাই তারা এমন একজন এমপি পাননি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় অনেকেই জানান, অন্য আসনগুলোতে এমপির বরাদ্দের গভীর নলকূপ পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। এমনকি সরকারি নির্ধারিত ফি’র চেয়েও অধিক পরিমান টাকা ওইসব এমপিদের নিজস্ব লোকের কাছে আগাম জমা দিতে হয়। এক্ষেত্রে অনেকেই প্রতারিত হওয়ার একাধিক ঘটনাও রয়েছে বলে জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গ্রাম এলাকায় বিশুদ্ধ পানীয় জলের সরবরাহ নিশ্চিত করতে গভীর নলকূপ স্থাপন সরকারের একটি দীর্ঘমেয়াদি চলমান প্রকল্প। এ প্রকল্পের আওতাধীন মনোনীত উপকারভোগীরা প্রত্যেকে সরকারিভাবে একটি করে গভীর নলকূপ প্রাপ্ত হয়ে থাকেন। অবশ্য এর জন্য নিয়ম অনুযায়ী সরকারি কোষাগারে ৭ হাজার টাকা করে জমা দিতে হয় প্রত্যেক উপকারভোগীকে। এই টাকা সরকারের কোন একটি ট্রেজারি ব্যাংকে চালানের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে বাস্তবায়ন সংস্থা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর পরিশোধ করার নিয়ম। বিনিময়ে সরকার একেকজন উপকারভোগীকে ৭৫ হাজার টাকা মূল্যের একটি করে গভীর নলকূপ প্রদান করে থাকে। প্রকল্পের নিয়ম অনুযায়ী যা সরকারের নির্দিষ্ট বাস্তবায়ন সংস্থা নিজ দায়িত্বে নির্ধারিত স্থানে স্থাপন করে দেয়। বিগত কয়েক বছর থেকে সরকার বিভিন্ন মাধ্যমে বরাদ্দ দিয়ে গভীর নলকূপ স্থাপন প্রকল্প বাস্তবায়ন নিশ্চিত করে চলছে। তম্মধ্যে উল্লেখযোগ্য বরাদ্দপ্রাপ্ত হন স্থানীয় সংসদ সদস্য।
লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল এর উপ পরিচালক নাসির উদ্দিন জানান, এমপি নিজেই উপকার ভোগীদের সরকারি ফি জমা দেয়ার বিষয়টি বিরল।
জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর-২ (সদর আংশিক ও রায়পুর) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট নুর উদ্দিন চৌধুরী নয়ন জানান, প্রশংসা পাওয়ার জন্য নয়। নির্বাচনী ওয়াদা পূরণের জন্যই তিনি ব্যাক্তিগত তহবিল থেকে এ টাকা জমা দেন। নিজ এলাকার জনগণের কাছে তিনি বিভিন্নভাবে দায়বদ্ধ বলে জানান। নির্বাচনে তিনি গভীর নলকূপ সবসময় বিনামূল্যে বিতরণ করবেন বলে ঘোষণা দেয়ার কথাও স্মরণ করে জানান। এছাড়া নিজের নির্বাচনী এলাকার সড়ক যোগাযোগের উন্নয়নসহ অবকাঠামোগত আরও উন্নয়নের প্রতিশ্রুতিও তিনি জনগণকে দিয়েছেন বলে জানান। সেইসব ক্রমান্বয়ে তিনি নিশ্চিত বাস্তবায়ন করবেন বলে দৃঢ়তা প্রকাশ করেন।