জাহাঙ্গীর আলমের এখন কী হবে

গাজীপুর সংবাদ দাতাঃ

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তির দায়ে গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছেন। আইনি ব্যবস্থার পাশাপাশি তাকে মেয়র পদ থেকে সরানোর দাবিও উঠেছে। মেয়র পদ নিয়ে এখন কী হবে সে আলোচনা সর্বত্র। দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত হওয়া গাজীপুরের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম দল থেকে বহিষ্কৃত হওয়ায় মেয়র পদে থাকতে পারবেন কি না- সাংবাদিকদের প্রশ্নে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেছেন, আইন দেখে পরে এ ব্যাপারে মন্তব্য করা হবে। আর আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চেয়ে বহিষ্কারাদেশ পুনর্বিবেচনার অনুরোধ জানিয়েছেন মেয়র জাহাঙ্গীর আলম। গতকাল দুপুরে মহানগরের ছয়দানায় তার বাসভবনে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।

মেয়র জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী সঠিক ও সত্য কথা জানলে আমি ন্যায়বিচার পেতাম। দল থেকে বহিষ্কার করায় আমার পরিবার ও আমি যে আঘাত পেয়েছি তা মানসিকভাবে মেনে নিতে পারছি  না।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী আমাদের আদর্শের জায়গা, তিনি আমার মায়ের মতো। বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী আমার অস্তিত্ব। আমার প্রাণের ভিতরে তাঁদের স্থান। আমি আবারও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানাব আমার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করার জন্য। কোনো পদে থেকে নয়, আওয়ামী লীগের হয়ে কাজ করার সুযোগ দেওয়ার জন্য আমার এই অনুরোধ।’

জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমার ভুল হতে পারে, কিন্তু আমি কোনো পাপ বা অন্যায় করিনি। আমার ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে সঠিক তথ্য না দিয়ে তাকে ভুল বোঝানো হয়েছে। ভুল করলে ক্ষমা পাওয়া যায়। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চাই। আমি নেতা হিসেবে নয়, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে, আওয়ামী লীগের কর্মী হিসেবে কাজ করে যেতে চাই।

তিনি বলেন, ‘আমি দুই মাস ধরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি। কিন্তু দেখা করতে পারিনি বলে মিথ্যা অপবাদের শিকার হয়েছি।’ সংবাদ সম্মেলনের আগে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী মেয়রের বাসায় ভিড় জমান। অত্যধিক ভিড়ের কারণে তিনি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের বদলে বাসার চত্বরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের সামনে তার বক্তব্য প্রদান করেন। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুর রউফ নয়ন, অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন বাবুল, যুগ্ম-সম্পাদক এস এম মোকছেদ আলম, সাংগঠনিক সম্পাদক মো. মজিবুর রহমান, কাউন্সিলর মনিরুজ্জামান, জাহাঙ্গীর আলম, সেলিম রহমানসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডের নেতা-কর্মীরা মেয়রের বাসভবনে উপস্থিত ছিলেন।

মেয়র বলেন, ‘সিটি নির্বাচনের আগে থেকেই আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা হয়েছে। আমি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলতে পারি, মহানগরের ২ হাজার ৮০০ কারখানা থেকে কোনো অর্থসাহায্য নিইনি, বরং তাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছি। আমি যদি অন্যায় করে থাকি তবে মামলা দিয়ে গ্রেফতার নয়, আমি নিজে গিয়ে সারেন্ডার করব। আমাকে ফাঁসি দিলেও মেনে নেব। কিন্তু আমার জন্য যেন কোনো কর্মী হয়রানির শিকার না হন।তিনি বলেন, ‘যারা ঘরে গিয়ে গোপনে অডিও করে তারা মানুষও হত্যা করতে পারে। ২-৩ ঘণ্টার অডিওর মধ্যে কাটছাঁট করে ৩-৪ মিনিট অথবা ৩০ সেকেন্ডের অডিও জোড়া দিয়ে মূল কথা প্রকাশ না করে আংশিক প্রকাশ করে আমাকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে।

তিনি আবারও ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুল আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘আমার কাছে আপনি মায়ের স্থানে, আদর্শের স্থানে রয়েছেন। আপনি বঙ্গবন্ধুকন্যা, মানবতার আদর্শ। আমার ব্যাপারে মিথ্যা তথ্য দেওয়া হয়েছে, যা আমার কাছে খুবই বেদনাদায়ক। আমি আওয়ামী লীগের সমর্থক হিসেবে কাজ করে যেতে চাই।

গতকাল ঢাকার সোনারগাঁও হোটেলে ড্যাপ নিয়ে এক অনুষ্ঠানে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামকে পেয়ে জাহাঙ্গীরের বিষয়ে প্রশ্ন করেন সাংবাদিকরা।

জবাবে তিনি বলেন, মেয়র পদে থাকবে কি না, এ বিষয়ে আইন পর্যবেক্ষণ না করে আমার পক্ষে মন্তব্য করা সম্ভব নয়। আইন দেখে পরে এ ব্যাপারে মন্তব্য করা হবে। এখন মেয়র আছে। কত দিন থাকবে তা আইন দ্বারা নিষ্পত্তি করবেন।