গর্ভাবস্থায় মা ও সন্তানের পরিচর্যার নিয়মাবলী

গর্ভাবস্থায় মা ও সন্তানের পরিচর্যার নিয়মাবলী

আসুন জেনেনিঃ

গর্ভধারণ ও সন্তান প্রসব নারী জীবনের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এর মধ্য দিয়েই মানব সভ্যতা টিকে থাকে ও এগিয়ে যায়। তাই নিরাপদ গর্ভধারণ এবং সুস্থ স্বাভাবিক সন্তান জন্মদানের জন্য এ সময় বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। আজ আলোচনা করবো কিভাবে একজন গর্ভবতী মা বাড়িতে তাঁর নিজের যত্ন নিবেন।

আহারঃ-
গর্ভাবস্থায় মায়ের ও সন্তানের প্রয়োজনীয় পুষ্টি নিশ্চিত করতে মায়ের স্বাভাবিক অন্য সময়ের তুলনায় অতিরিক্ত খাবারের প্রয়োজন হয়। তাই এ সময় গর্ভবতী মায়ের জন্য দরকার সুষম খাদ্যতালিকা। পর্যাপ্ত পরিমাণে মাছ, মাংস, ডাল, ডিম ও দুধ প্রয়োজন। এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে মৌসুমি ফল ও শাক-সবজি খেতে হবে। প্রচুর পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। এ সময় অতিরিক্ত তেল ও মসলাযুক্ত খাবার না খাওয়াই উত্তম।

কাজকর্মঃ-
গর্ভাবস্থায় সংসারের ছোটখাট ও স্বাভাবিক কাজকর্ম করতে পারবেন। তবে ভারি কাজ অবশ্যই এড়িয়ে চলতে হবে। গর্ভাবস্থায় প্রথম ও শেষ তিনমাস অতিরিক্ত পরিশ্রম না করে হালকা হাঁটাচলা করবেন। পিচ্ছিল জায়গায় হাঁটা যাবে না। সিঁড়ি ব্যবহারের সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।

ব্যায়ামঃ-
পেটের উপর চাপ পরে এবং দুর্ঘটনার আশঙ্কা আছে—এমন ব্যায়াম করা যাবে না। এছাড়া স্বাভাবিক ব্যায়াম করা যাবে।

ঘুম ও বিশ্রামঃ-
প্রতিরাতে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ও দিনে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা ঘুমাবেন বা বিশ্রাম নিবেন। এ সময় বামপাশে কাত হয়ে শোয়া উত্তম।

পরিধেয়ঃ-
আরামদায়ক, সহজে পরিধানযোগ্য ও ঢিলেঢালা পোশাক পরবেন। সঠিক মাপের এবং নরম জুতা পরবেন এবং অবশ্যই হিল জুতা পরিহার করবেন।

ভ্রমণঃ-
গর্ভাবস্থায় প্রথম ও শেষ তিন মাস দীর্ঘ ভ্রমণ পরিহার করা উচিত। এছাড়া উঁচু-নিচু বা ভাঙা রাস্তা কিংবা ঝাঁকির আশঙ্কা আছে—এমন যানবাহন পরিহার করবেন।

স্বাস্থ্য পরীক্ষা ও ওষুধ সেবনঃ-
গর্ভাবস্থায় কমপক্ষে চারবার স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বা হাসপাতালে যেয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। এ সময় প্রয়োজন অনুসারে টিটেনাস টিকা নিতে হবে। অনেক ওষুধ আছে, যা গর্ভাবস্থায় মা ও গর্ভের সন্তানের জন্য ক্ষতিকর। তাই চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত কোনো ওষুধ সেবন করা যাবে না।

মানসিক স্বাস্থ্যঃ-
অতিরিক্ত আবেগ, মানসিক চাপ, দুশ্চিন্তা ও ভয় ইত্যাদি গর্ভবতী মায়ের স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সবসময় ভালো চিন্তা করতে হবে। মানসিকভাবে চাপমুক্ত ও সুস্থ থাকতে কোরআন তিলাওয়াতসহ বিভিন্ন ইবাদত করা খুবই উপকারী৷

দৈহিক মিলনঃ-
শারীরিক কোনো সমস্যা না থাকলে সতর্কতার সঙ্গে গর্ভাবস্থায় দৈহিক মিলন করা যাবে, এটি নিরাপদ। গর্ভাবস্থায় দৈহিক মিলনের নিয়ম ও সতর্কতাগুলো জেনে নিতে হবে। কোন সমস্যা থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শানুযায়ী সাময়িক বিরতি দেওয়া যেতে পারে।

বিশেষ যত্নঃ-
গর্ভাবস্থায় প্রতিদিন সাবান দিয়ে ভালোভাবে গোসল করতে হবে। পরিষ্কার-পরিপাটি থাকতে হবে। হাত-পায়ের নখ কেটে ছোট রাখতে হবে। এ সময় মায়েদের দাঁতগুলো বেশ নরম হয়ে যায়৷ তাই দাঁত ও মাড়ির বিশেষ যত্ন নিতে হবে৷ গর্ভাবস্থায় শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা স্বাভাবিকের চেয়ে কম থাকে। তাই ইনফ্লুয়েঞ্জা, হাম, চিকেন পক্স ও জন্ডিস ইত্যাদি ছোঁয়াচে রোগে আক্রান্ত রোগী থেকে দূরে থাকতে হবে৷