মানবাধিকার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টিতে গুরুত্বারোপ প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানবাধিকার ও নাগরিকদের দায়িত্ব সম্পর্কে দেশের মানুষের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টির প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেছেন, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার পূর্বশর্ত আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার ও নাগরিকদের দায়িত্ব সম্পর্কে দেশবাসীকে জানাতে হবে কেননা অধিকার ও দায়িত্ব একে অপরের পরিপূরক। একের দায়িত্ব অপরের অধিকার। আবার একের অধিকার অপরের দায়িত্ব।
প্রধানমন্ত্রী আজ মানবাধিকার দিবস-২০১৯ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।
তিনি বলেন, মানবাধিকার রক্ষায় অধিকার ও দায়িত্ব স্পষ্ট করতে সচেতনতামূলক প্রচারণা পরিচালনার প্রয়োজন রয়েছে।
জাতীয় মানবাধিকার কমিশন (এনএইচআরসি) রাজধানীর একটি হোটেলে ইউএনডিপি’র সহায়তায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার রক্ষায় এনএইচআরসি নাগরিকদের দায়িত্ব ও তাদের অধিকার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
মানবাধিকার রক্ষায় আইনের শাসনকে খুবই প্রয়োজনীয় বিষয় হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে কাজ করে যাচ্ছি। অতএব অপরাধী যেই হোক না কেন তাকে শাস্তি পেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার শ্রেণী ও পেশা নির্বিশেষে মানবাধিকার রক্ষায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
তিনি বলেন, মানবাধিকার রক্ষার পাশাপাশি সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ, মাদক ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে। এসব অপরাধকে আমাদের দমন করতে হবে। কারণ এই অপরাধীরা সমাজকে ধ্বংস করে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানবাধিকার রক্ষার পাশাপাশি সরকার তার কার্যক্রম অব্যাহত রাখবে।
এ বছর মানবাধিকার দিবসের প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘মানবাধিকার সুরক্ষায় তারুণ্যেও অভিযাত্রা’।
প্রতি বছর ১০ ডিসেম্বর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মানবাধিকার দিবস পালন করে আসছে। ১৯৪৮ সালের এই দিনে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র গৃহীত হয়।
আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন এবং এনএইচআরসি’র চেয়ারম্যান নাসিমা বেগম অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।কমিশনের সার্বক্ষণিক সদস্য ড.কামাল উদ্দিন আহমেদ এবং জাতিসংঘের আবাসিক প্রতিনিধি মিয়া সিপ্পো অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে মানবাধিকার বিষয়ক ডকুমেন্টারি ভিডিও প্রদর্শনের পাশাপাশি দিবসের থিম সং বাজানো হয়।

শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা সকল মানবাধিকার লংঘনের বিচার সম্পন্ন করার মাধ্যমে আইনের শাসন বজায় রাখতে চাই।’
তিনি আরো বলেন, মানবাধিকার রক্ষার অর্থ কেবল লোকদের দৈহিকভাবে রক্ষা করা নয়, বরং তাদের মৌলিক অধিকারসমূহও পূরণ করা, যার জন্য তাঁর সরকার কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, ‘দারিদ্র্য ও ক্ষুধা মুক্ত সোনার বাংলা গড়ে তোলা বঙ্গবন্ধুর আকাক্সক্ষা অনুযায়ী, কোন লোকই গৃহহীন থাকবে কিংবা ক্ষুধার্ত থাকবে না। সকলেই শিক্ষা, বস্ত্র ও চিকিৎসা সুবিধা পাবে।’
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা মিয়ানমারের সঙ্গে কোন সংঘাতে জড়াচ্ছি না, বরং আলোচনা হচ্ছে। কারণ তারা (মিয়ানমার) তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকালে আমাদের অনুরূপ অভিজ্ঞতা থাকায় মানবিক বিবেচনায় আমরা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছি।’
১১ লক্ষাধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমারে অমানবিক নির্যাতনের মুখে রোহিঙ্গারা ব্যাপক হারে বাংলাদেশে আসে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশীদের যেমন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হয়েছিল।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা যুদ্ধকালে ভারতে শরণার্থী হিসেবে এক কোটিরও বেশি লোকের আশ্রয় গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের হত্যাকারীদের বিচার বন্ধ করার জন্য ইনডেমিনিটি বিল পাশ করা ছিল মানবাধিকারের সুষ্পষ্ট লংঘন ।
তিনি আরো বলেন, ‘অত্যন্ত দুঃখের বিষয় ছিল যে তাদের বিচার হবে না এই ঘোষণা দিয়ে তারা উদ্ধত্য দেখিয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঘাতকদের কেবল বিদেশে মিশনে চাকরি দিয়েই পুরস্কৃত করা হয়নি, বরং তাদের রাজনীতিতেও পুনর্বাসিত করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এক হত্যাকারীকে সংসদে বিরোধীদলীয় নেতা বানানো হয়, আরেকজন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে অংশ নিয়েছিল।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা শাসন ভার গ্রহণের পর ইনডেমিনিটি বিল বাতিল হলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের উদ্যোগ গ্রহণ করি এবং তা সম্পন্ন করি।’
স্বাধীনতার পর পরই বঙ্গবন্ধু যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করেছিলেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতার হত্যাকান্ডের পর জিয়াউর রহমান এই বিচার বন্ধ করে দেয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর মানবাধিকার লংঘনের অপরাধ থেকে মুক্তির সূচনা হয়। অতপর জিয়াউর রহমান ক্যু’র নামে বহু মানুষ হত্যা করে। তিনি আরো বলেন, এ কারণে দেশবাসীকে এই বেদনা নিয়ে ২৯টি বছর পার করতে হয়।
তিনি বলেন, ‘দায়িত্ব গ্রহণের পর আমরা মানবাধিকার লংঘনের বিষয়টি আইনের আওতায় আনি যাতে ভবিষ্যতে মানবাধিকার লংঘনের পুনরাবৃত্তি না ঘটে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই উদ্যোগের অংশ হিসাবে তার সরকার বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারিদের বিচার সম্পন্ন এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য শুরু করে।
সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে দেশে সম্প্রতি কতিপয় চাঞ্চল্যকর মামলার নিষ্পত্তির উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে অত্যন্ত সজাগ রয়েছে।
তিনি বলেন, ‘জনগণের সেবক হিসাবে সরকারে থাকার কারণে সম্প্রতি যে কোন মানবাধিকার লংঘনের মামলার ব্যাপারে আমরা সক্রিয় ভূমিকা পালন করছি।’
‘যুবকরা মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়াবে’ এ বছরের এ প্রতিপাদ্যকে সময়োপযোগী হিসেবে বর্ণনা করে শেখ হাসিনা বলেন, যুবকরা জাতির ভবিষ্যত, কারণ তারাই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি মানবাধিকার রক্ষার প্রচেষ্টা নেবে।
বাংলাদেশ জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে তিন বছরের জন্য সদস্যপদ নিশ্চিত করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার নারী, শিশু, শ্রমিক ও শারিরীক প্রতিবন্ধিদের মানবাধিকার রক্ষায় অনেক আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষর এবং অনুমোদন করেছে।
দেশের মানুষের মানবাধিকার সুরক্ষায় আওয়ামী লীগের অঙ্গীকারের উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ২০০৯ সালে জাতীয় মানবাধিকার কমিশন আইন প্রণয়ন করেছে।
তিনি বলেন, নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী সরকার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে শক্তিশালী করতে এবং মানবাধিকার সুরক্ষায় এর সুপারিশসমূহ বাস্তবায়নে কাজ করছে।
মানবাধিকারের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট এসডিজির অধিকাংশ লক্ষ্যমাত্রা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার এই লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘কেউ পিছনে পড়ে থাকবে না’ তার সরকার এই লক্ষ্যে কাজ করছে। বাসস