পুলিশের উপর হামলা, ঘটনায় আটক ৫

মো.সিরাজুল হক রাজু,বরিশাল:

বরিশাল ওয়ার্ড কাউন্সিলরের নেতৃত্বে পুলিশের ওপর হামলা। এসময়ে কোতয়ালী মডেল থানার পুলিশ পরির্দশকের (অপারেশন-২) মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায় ওই কাউন্সিলরের বাহিনী বলে পুলিশের অভিযোগ। ৯৯৯ নম্বরে কল পেয়ে বৃহস্পতিবার (২৭ মে) সিটি কর্পোরেশনের ২১ নং ওয়ার্ডের মানু মিয়ার গলিতে গেলে দুপুরে উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। হামলায় অভিযুক্ত পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ।


আটককৃতরা হলেন- গোরস্থান রোডের বাসিন্দা, তানভির খান তুষার (২২), হাশেম (২২), সুমন দাস (২৫), তানভীর ইসলাম (২১) বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। ওদিকে হামলায় আহতরা হলেন, পুলিশ পরিদর্শক আনোয়ার হোসেন ও সহকারি উপ পরিদর্শক মিজান।

জানা গেছে, মানু মিয়ার গলি এলাকার বাসিন্দা নিক্কন বিশ্বাস ও বিলাস বিশ্বাসের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে বেশ কয়েকবার শালিস হয়েছে। সর্বশেষ লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয় ২১ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্নার কাছে। তবে শালীসিতে কাউন্সিলর এক পক্ষ অবলম্বন করে বলে অভিযোগ করেন বিলাস বিশ্বাস।
ওদিকে বৃহস্পতিবার বিরোধপূর্ণ জমিতে কাজ শুরু করে নিক্কন বিশ্বাস। তখন বিলাস বিশ্বাস ৯৯৯ নম্বরে কল করলে ঘটনাস্থলে পুলিশ আসে। এতে ক্ষিপ্ত হন শালিসদার ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্না।

বিলাস বিশ্বাস জানান, ওই জায়গায় আমরা ৪০ বছর ধরে বসবাস করছি। আমার কাকা বিমল বিশ্বাসের কাছ থেকে দেড় শতাংশ জমি সাফ কবলা দলিল গ্রহণের উদ্দেশ্যে ধার্যকৃত মূল্য বায়না চুক্তি অনুযায়ী প্রদান করি। এর মধ্যে বিমল বিশ্বাসের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিশদের দলিল করে দিতে বললেও নানা ভাবে ঘুরাচ্ছে আমাকে। পরবর্তীকে আমার কাকা বিমল বিশ্বাসের ছেলে অর্থাৎ আমার কাকাতো ভাই নিক্কন বিশ্বাস সহ তার দলীয় লোকজন আমার বসত ঘর ভাঙচুর সহ নানা ভাবে হুমকি ধামকি দিয়েছে।


২৪ মে ইট বালু এনে আমার ঘরের পাশে জড় নতুন করে স্থাপনা করার চেষ্টা চালায় আমার জমিতে। আমার ঘরও ভাঙচুর করা হয়। এই ঘটনায় আমি কোতয়ালী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরীও করেছি। কিন্তু আজ সকালে তারা আবার কাজ শুরু করলে আমি থানায় খবর দেই।


এরপর নিক্কনের পক্ষে মান্না ভাইও আসে। পুলিশ আর মান্না ভাইর মধ্যে ঝামেলা হয়েছে। কাউন্সিলর সাহেব পুলিশকে গালাগাল করে মোবাইল নিয়ে যায় ছিনাইয়া। সকাল থেকে কাউন্সিলর মান্না ভাইর লোকজনও দাড়িয়ে থাকে ওদের কাজের জন্য। নিক্কন বিশ্বাসের স্ত্রী জেসমিন বিশ্বাস বলেন, ওই জমিটা আমাদের। আমার স্বামী ওদের থাকতে দিয়েছিল। কাউন্সিলর শালিসি করে বলেছেন, আমরা যদি ওদের (বিলাস বিশ্বাস) থাকতে দেই তাহলেই ওরা থাকতে পারবে। কাউন্সিলর তিনদিন সময় বেধে দিয়েছিল তাদের রান্না ঘর ভেঙে ফেলার জন্য। ওখানের জায়গাটা উচু করে আমরা থাকবো তাই।


তিনদিন সময়ের পর না ভাঙায় তারপর কাউন্সিলর লোক পাঠায় বিলাসদের রান্না ঘর ভাঙার জন্য। আমাদেরও সেখানে কাজ শুরু করতে বলে এবং কাউন্সিলর বলেছে আমরা কাজ করার সময় তার লোকজন সেখানে দাড়িয়ে থাকবে। এরপর বিলাসরা নানা জায়গায় নালিশ দেছে, পুলিশ আনছে। আজকে আমরা কাজ শুরু করার সময় ওরা বাধা দিলে বিষয়টা কাউন্সিলর মান্নাকে জানানো হয়। এরপর সে এখানে আসলে পুলিশের সাথে গন্ডগোল হতে দেখেছি।


বরিশাল কোতয়ালী মডেল থানা পুলিশের উপ পরিদর্শক রেজাউল ইসলাম রেজা বলেন, ৯৯৯ এ কল পেয়ে আমরা এখানে এসেছি। আমরা দুই পক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছিলাম। এর মধ্যে কাউন্সিলর মান্না এসে আমাদের গালিগালাজ করেন, মারতে আসেন। আমাদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। পুলিশ পরিদর্শক (অপারেশন-২) আনোয়ার হোসেন বলেন, প্রথমে একজন সাব ইন্সপেক্টর পাঠানো হয় ঝামেলার কথা শুনে। পরবর্তীতে আমি আসি। অভিযোগ ছিলো এখানে অবৈধভাবে একজনের বাসা উচ্ছেদ করা হচ্ছিল। ঘটনাটা বোঝার জন্য দুই পক্ষকে ডেকে কথা বলছিলাম।


এর মধ্যে কাউন্সিলর মান্না তার বিশাল বাহিনী নিয়ে এসে আমার উপর আক্রমন করে, আমার মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আমাকে বলছে, ‌‘তুই এখানে কেন আসছোস? এই বরিশাল আমার এলাকা। তুই কে? তোর পোশাক খুলে নিয়া যাবো। আমাদের আক্রমন করতে আসার সময় ৫ জনকে আটক করা হয়েছে।
এ বিষয়ে ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ সাঈদ আহম্মেদ মান্না সাংবাদিকদের বলেন, জায়গাজমি পরিমাপ নিয়ে একটু ভুলবোঝাবুঝির ঘটনা ঘটেছে। তবে নিউজ করার মত কোন ঘটনা ঘটেনি।


ওদিকে ঘটনাস্থলে পুলিশ অবরুদ্ধ রেখে তিনি তার ফেসবুক প্রফাইল থেকে লাইভে সংযুক্ত হয়ে পুলিশ সদস্যদের বিভিন্ন ধরণের জেরা করেন। এমনই একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে বিভিন্ন মাধ্যমে। যদিও কিছুক্ষণ পরে লাইভের সেই ভিডিওটি ডিলিট করে দেন মান্না। ওদিকে আরেকটি ভিডিও পায় প্রতিবেদক, যেখানে মান্নার কণ্ঠ শোনা যায়। সেই ভিডিওতে শোনা গেছে অশ্লিল ভাষায় পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ্য করে গালিগালাজ করছেন কাউন্সিলর মান্না ।