ঝালকাঠিতে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পে স্বপ্নের পেয়ে খুশীতে আত্মহারা ভুমিহীন পরিবার

আমির হোসেন, ঝালকাঠি প্রতিনিধিঃ

মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে অসহায় দরিদ্র ও ভূমিহীনদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে দেওয়া ঘর নির্মাণে অনিয়মের বিষয় নিয়ে সারাদেশে তোলপাড় শুরু হলেও ঝালকাঠির রাজাপুরের ৩৭০ ভূমিহীন পরিবার ওইসব ঘর পেয়ে তারা এখন মহাখুশীতে দিন কাটাচ্ছেন। তাদের চোখে এখন নতুন জীবনের স্বপ্ন। যদিও প্রথম দিকে নির্মাণকালীন সময়ে কয়েকটি ঘরে কিছু সাধারণ ত্রুটি দেখা দিলেও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাৎক্ষনিকভাবে ওই সব ঘরের ত্রুটিপূর্ণ স্থানগুলো মেরামত করে দেওয়া হয়। আর এরপর থেকেই এ উপজেলায় ঘরের ত্রুটির বিষয়ে উপকারভোগীদের কাছ থেকে আর কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। আশ্রায়ণ প্রকল্পের বসবাসকারীদের সুবিধার জন্য রয়েছে বিশুদ্ধ পানির গভীর নলকূপ, প্রতিটি ঘরে আছে বিদ্যুৎ। এক কথায় বলতে গেলে এখানকার- ৩৭০ ভুমিহীন পরিবারই প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসেবে দেওয়া ওইসব ঘর পেয়ে তারা এখন পরিবার নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবেই জীবন যাপন করছেন। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর আওতায় গৃহহীনদের জন্য প্রথম ধাপে ৩৩৩ বসতঘর করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকটি ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৭১ হাজার টাক। প্রতিটি ঘরের দৈর্ঘ্য ২২ ফুট ৪ ইঞ্চি ও প্রস্থ ১৯ ফুট ৬ ইঞ্চি। ঘরগুলো মেঝে পাকা, সামনে খোলা বারান্দা, পাশে ইট উপরে টিন দিয়ে নির্মিত হয়েছে। ভিতরে রয়েছে রান্না ঘর ও টয়লেটের ব্যবস্থা। দ্বিতীয় ধাপে ৩৭ বসতঘর করে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যকেটির ঘরের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে এক লাখ ৯০হাজার টাকা। দ্বিতীয় ধাপের প্রকল্পের প্রতিটি ঘরের দৈর্ঘ্য ২২ ফুট ৮ ইঞ্চি, ও ১৯ ফুট ৬ ইঞ্চি। ঘরগুলো মেঝে পাকা, সামনে খোলা বারান্দা, পাশে ইট উপরে টিন দিয়ে নির্মিত হয়েছে। ভিতরে রয়েছে রান্না ঘর ও টয়লেটের ব্যবস্থা। আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাসকারী পলি (২৫) বেগম বলেন, কোনও রকম একটি ঝুপড়ি ঘরের মধ্যে বাস করতেন। টাকাপয়সার অভাবে ঘর করতে পারেননি। বর্ষা ও শীতে অনেক কষ্ট পেতেন। এখন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘরে থাকবেন। এখানে বিদ্যুৎ পাইছি, খাবার বিশুদ্ধ পানি পাইছি। এখন আর কষ্ট হবে না। ভুমিহীন বাদশা (৩০) বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মায়ের মতো কাজ করেছেন। নিজের মতো করে পরিবার নিয়ে ঘরে থাকি–এর চেয়ে খুশি আর কী হতে পারে। আগে আমার অনেক কষ্টে দিন কাটতো এখন অনেক সুখে আছি। তার চোখেমুখে হাসির ঝিলিক। আশ্রয়ণ প্রকল্পে উপকারভোগী দেলোয়ার হোসেন দিলু (৬৫) বলেন,আগে মোর কোনো ঘর আলহে না। এখন সরকার মোর জন্য ঘর বানাইয়া দিছে। মুই এই ঘরেতে থাকি। মোরা এহানে যারা থাকি সবাই খুব খুশি, এই আনন্দ মুই বোঝাতে পারমু না। মুই শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাই। ওষোত ব্রম্ম (৫০) বলেন, আগে মুই রাজাপুরে ভাড়া বাসায় থাকতাম, মোর ঘর আলহে না। মুই ছোট একটা দোকানে মেকারের কাজ করি টাকা যা পাই হে ঘর ভাড়া দিলে ঠিক মতো খাইতে পারি না, এজন্য খুবই সমস্যাতে আলহাম। বিনা টাকায় প্রধানমন্ত্রী মোরে ঘর করে দেওয়ায় সে সমস্যা দূর হইছে। রাজাপুর উপজেলার ছয় ইউনিয়নে যাদের জমি ও ঘর নেই, এমন ৩৭০ পরিবারের মাধ্যে এসব ঘর বিতরণ করা হয়েছে। ঘর পেয়ে খুশি এলাকার অসহায় মানুষেরা। এজন্য তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন। রাজাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন জানান, মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে আশ্রয়ণ প্রকল্প ২ এর আওতায় রাজাপুর উপজেলায় সারা দেশের ন্যায় প্রথম পর্যায় ৩৩৩টি ঘরের ঘর প্রতি বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৭১ হাজার টাকা এর মধ্যে মাটি ভরাটের কোনো বরাদ্দ ছিল না এবং দ্বিতীয় পর্যায় ৩৭টি ঘরের ঘর প্রতি বরাদ্দ ছিল এক লাখ ৯০হাজার টাকা।এর মধ্যে মাটি ভরাটের জন্য কিছু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায় সর্বমোট ৩৭০টি গৃহের মাঝে ঘর হস্তান্তর করা হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর মানবিক এই উদ্যোগের সফল বাস্তবায়নে আমরা রাত-দিন আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি। উপজেলা টাস্কফোর্স কমিটির মাধ্যমে গৃহহীনদের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে গৃহনির্মাণ প্রায় শতভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কেবল কয়েকটি ঘরের রং করণ বাকী আছে। এর ফলে সমাজের অবহেলিত মানুষগুলোর সামাজিক মূল্যায়ন বৃদ্ধিসহ প্রাত্যহিক জীবনের দুর্ভোগ থেকে মুক্তি মিলবে।