ইভ্যালী বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ছিল, যা ২০১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রতিষ্ঠানটি তার গ্রাহকদের আকর্ষণীয় ডিসকাউন্ট ও অফার প্রদান করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। ইভ্যালী তাদের ওয়েবসাইট এবং মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে বিভিন্ন পণ্য যেমন ইলেকট্রনিকস, ফ্যাশন, গৃহস্থালী সামগ্রী, এবং অন্যান্য সেবা বিক্রি করছিল। প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের প্রলোভন দিতে বিপুল ডিসকাউন্ট ও বিশেষ অফার দিত, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ তাদের কাছে পণ্য কিনতে গিয়েছিল।
তবে, ২০২১ সালের শেষে প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন আর্থিক সমস্যা এবং গ্রাহকদের পণ্য বা সেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যর্থতার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়। ইভ্যালী সঠিকভাবে তাদের প্রতিশ্রুত পণ্য সরবরাহ করতে পারেনি, এবং প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে পঞ্জি স্ক্যাম (Ponzi Scheme) চালানোর অভিযোগ ওঠে। এখানে, নতুন গ্রাহকদের থেকে অর্থ সংগ্রহ করা হচ্ছিল এবং পুরনো গ্রাহকদের পণ্য বা সেবা দেওয়ার পরিবর্তে তাদের টাকা পরিশোধ করা হচ্ছিল।
কিউকমও বাংলাদেশের একটি ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম ছিল, যা বেশ কিছু সময় ধরে সেলস অফার ও বিভিন্ন ডিসকাউন্টে পণ্য বিক্রি করে গ্রাহকদের আকর্ষণ করছিল। এই প্রতিষ্ঠানটিও বেশ জনপ্রিয় হয়েছিল এবং ব্যাপক সংখ্যক গ্রাহক ছিল। কিউকমও গ্রাহকদের বড় বড় ডিসকাউন্ট এবং বিশেষ প্রোগ্রাম দিত, যা লোকজনকে আকৃষ্ট করেছিল।
কিন্তু পরবর্তীতে কিউকমের বিরুদ্ধেও আর্থিক অনিয়ম এবং গ্রাহকদের দেওয়া পণ্যের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করতে না পারার অভিযোগ উঠেছিল। প্রতিষ্ঠানটি কার্যকরীভাবে ব্যবসা চালানোর পরিবর্তে নতুন গ্রাহকদের টাকা দিয়ে পুরনো গ্রাহকদের প্রতিশ্রুতি পূরণ করতে চেষ্টা করছিল, যা পঞ্জি স্ক্যামের মতো কার্যক্রমের একটি পরিচিত বৈশিষ্ট্য।
ইভ্যালী এবং কিউকমের বিরুদ্ধে পঞ্জি স্ক্যাম চালানোর অভিযোগ উঠেছে। পঞ্জি স্ক্যাম এমন একটি প্রতারণামূলক আর্থিক কৌশল, যেখানে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে এবং পুরনো বিনিয়োগকারীদের (অথবা গ্রাহকদের) লাভ দেওয়ার জন্য তা ব্যবহার করা হয়। এর ফলে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানটি টিকে থাকতে পারে, তবে একসময় এটি ধসে পড়ে এবং গ্রাহকরা তাদের বিনিয়োগ হারায়।
এটি একটি বড় বিতর্কের বিষয়, কারণ অনেকেই দাবি করছেন যে বাংলাদেশ সরকারের কিছু উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ইভ্যালী ও কিউকমের মতো প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন দিয়েছেন, যা তাদের ব্যাপকভাবে ক্ষতির সম্মুখীন করে। সরকারের নির্লিপ্ততা এবং বিচারিক ব্যবস্থার ধীরগতির কারণে, এসব প্রতিষ্ঠানদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি, যার ফলে হাজার হাজার মানুষ তাদের টাকা হারিয়েছে।
পঞ্জি স্ক্যাম (Ponzi Scheme):
পঞ্জি স্ক্যাম একটি আর্থিক প্রতারণামূলক কৌশল, যেখানে প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি নতুন বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে এবং পুরনো বিনিয়োগকারীদেরকে মুনাফা বা লাভ প্রদান করে। এই স্ক্যামের মূল বৈশিষ্ট্য হল, প্রকৃত ব্যবসা বা উৎপাদন কার্যক্রম না করে, পূর্বের বিনিয়োগকারীদের লাভ দেওয়ার জন্য নতুন বিনিয়োগকারীদের অর্থ ব্যবহার করা হয়। এটি একটি সময়সীমাবদ্ধ প্রতারণামূলক কৌশল, যা দীর্ঘস্থায়ী হয় না এবং শেষ পর্যন্ত এটি ধসে পড়ে।
পঞ্জি স্ক্যামের উপাদান:
- নতুন বিনিয়োগকারীদের থেকে টাকা সংগ্রহ: স্ক্যামটি শুরু হয় যখন নতুন বিনিয়োগকারীরা প্রতিশ্রুত মুনাফা বা লাভের জন্য টাকা বিনিয়োগ করে।
- পুরনো বিনিয়োগকারীদের লাভ প্রদান: এই টাকা নতুন বিনিয়োগকারীদের থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং পুরনো বিনিয়োগকারীদের লাভ দেওয়া হয়, যেন তারা সন্তুষ্ট থাকে এবং তাদের কাছ থেকে আরও টাকা আসে।
- অর্থের সঠিক ব্যবহার না হওয়া: এখানে কোন প্রকৃত ব্যবসায়িক কার্যক্রম বা উৎপাদন নেই। বরং, পুরো সিস্টেমটি নতুন বিনিয়োগকারীদের অর্থের উপর নির্ভরশীল।
- ধসে পড়া: যখন নতুন বিনিয়োগকারীদের প্রবাহ কমে যায় অথবা প্রতিষ্ঠানের টাকাগুলি শেষ হয়ে যায়, তখন এটি ভেঙে পড়ে এবং পুরনো বিনিয়োগকারীরা তাদের টাকা হারিয়ে ফেলেন।
ইভ্যালী এবং কিউকমের মতো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্মগুলো পঞ্জি স্ক্যামের মতো প্রতারণামূলক কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের টাকা আত্মসাৎ করেছে। এই ধরনের প্রতারণা থেকে জনগণকে রক্ষা করতে এবং সঠিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সরকারের এবং বিচারব্যবস্থার দ্রুত পদক্ষেপ প্রয়োজন।
বর্তমানে, ইভ্যালি গ্রাহকদের মধ্যে হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে, এবং তারা প্রশ্ন তুলছেন, “কীভাবে আইনের প্রতি এতো অবজ্ঞা সম্ভব?” সরকার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি তাদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব এই সমস্যার সমাধান করতে এবং ভবিষ্যতে এমন কোনো ঘটনা যেন না ঘটে, সেদিকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।