Monday, July 7, 2025

বাড়ছে সাংবাদিক কমছে সাংবাদিকতা-মো. রাব্বী মেল্লা

Date:

বিএনএসঃ

বাড়ছে সাংবাদিক কমছে সাংবাদিকতা-মোঃ রাব্বী মেল্লা

বিশ্বের জনসংখ্যা ও প্রযুক্তির সাথে তাল মিলিয়ে বাড়ছে গণমাধ্যমের সংখ্যা। তার সাথে বাড়ছে সাংবাদিকও। শুধু গণমাধ্যমই নয় দিনদিন বাড়ছে ফ্রিল্যান্সার সাংবাদিকের সংখ্যাও। এটা নিঃসন্দেহে খুশির খবর বলা যায়। কারন সাংবাদিকতা একটি মহান পেশা। এই পেশায় যতবেশি লোক জড়িৎ হবে দেশের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অসংগতি ততটাই কমে আসবে। ফলে দেশ পৌছে যাবে উন্নতির স্বর্ণশিখরে। তবে সাংবাদিকের সংখ্যা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেলেও প্রকৃত সাংবাদিকতা অনেকাংশে কমেছে বলে আমি মনে করি। অনুসন্ধানি সংবাদ তেমন একটা দেখা যায় না। গণমাধ্যম,অনলাইন, ইউটিউব সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একটা বড় অংশ প্রেস রিলিজ আর তেলবাজির দখলে। আমি প্রেস রিলিজ বা সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের বিপক্ষে নই। আমি চাই সংবাদ বিজ্ঞপ্তির পাশাপাশি সমানতালে চলুক অনুসন্ধানি সাংবাদিকতাও। একথা মনে রাখতে হবে যে, একজন সাংবাদিকের দায়িত্ব কতটুকু। একজন সাংবাদিক কি করতে পারে আর কি করতে পারে না। এসব বিষয় জেনে সঠিক দায়িত্বটা পালন করলে সমাজের সকল অসংগতি দূর হবে বলে আশা করছি। 
সাংবাদিকের সংখ্যা বৃদ্ধিকে স্বাগত জানাই, তবে প্রত্যেককে নিজের অবস্থান থেকে নিরপেক্ষ ও নির্ভিক সাংবাদিকতায় আরো সক্রিয়া হওয়া প্রয়োজন। কে কোথায়, কোন প্রতিষ্ঠানে বা কোন প্লাটফরমে সাংবাদিকতা করছে সেটা মূখ্য বিষয় নয়। মূখ্য বিষয় হচ্ছে সে কি লিখছে। তার লেখায় সমাজ ও জাতি কিভাবে উপকৃত হচ্ছে, নাকি ভুল পথে এগুচ্ছে। ধরুন একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি অনিয়মে জড়িয়ে দেশ ও জনগণের ক্ষতি করছে কিন্তু আমরা সেদিকে খেয়াল না করে, ব্যক্তিস্বার্থে তেল মারছি। তা একদিকে যেমন সাংবাদিকতার অন্তরায় অন্যদিকে দেশ ও জাতির জন্যও হুমকি। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে মানুষ ভালো কাজের চেয়ে খারাপের দিকেই বেশি ঝুঁকবে। তাই ব্যক্তি না দেখে কর্মের বিচারে সাংবাদিকতা করা প্রয়োজন। আবার একশ্রেণির সাংবাদিক আছেন তারা একটা সিন্ডিকেট তৈরি করে রেখেছেন। তাদের কথামতো সাংবাদিকতা না করলে তারা তাকে সাংবাদিক হিসেবেই মনে করেন না। এমনকি কৌশলী মেধাবি কলমকে আটকে দিতে নানাভাবে চেষ্টা করেন। আমরা চাই সাংবাদিকতা হোক হিংসা বিদ্বেষ মুক্ত। সাংবাদিকতায় অবশ্যই উদ্দেশ্য থাকবে আর সেটি হচ্ছে সমাজকে পরিষ্কার করা। জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করা। সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে ব্যক্তিস্বার্থ বিসর্জন দেয়া আবশ্যক।  কাউকে খুশি করা বা কেউ নারাজ হবে ভেবে সঠিক সংবাদকে রং মাখিয়ে ভিন্নদিকে প্রবাহিত না করার অঙ্গীকার হোক প্রত্যেক সাংবাদিকের।
সাংবাদিকদের বলা হয় জাতির বিবেক, রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ। সেই বিবেককে আবেগ দিয়ে বিবেচনা করলে কখনোই সাংবাদিকতার বাস্তব প্রতিফলন ঘটবেনা।  সাংবাদিকতায় নিজের বলতে কোন শব্দ রাখা উচিৎ নয়। এই পেশায় আত্মীয় স্বজন বন্ধু বান্ধব বিবেচনা মূখ্য বিষয় নয়। পরিচিতির উর্ধ্বে গিয়ে আমাদের ন্যয় নীতির বিচার করতে হবে। সংবাদ প্রকাশে তথ্য ডাইভার্ট বা গোপন করা যাবেনা। সবসময় সত্য প্রকাশে নির্ভিক থাকতে হবে। সত্য প্রকাশের ফলে কার পক্ষে গেল বা বিপক্ষে গেল তা আমাদের বিবেচ্য নয়।
সত্য প্রকাশে অনড় থাকতে হবে। প্রযোজনে অনুসন্ধান করতে হবে যতক্ষণ না নিশ্চিত হওয়া যায়, ততক্ষণ অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে সাংবাদিকতা মানে দারোয়ান। রাষ্ট্রের বা সমাজের দারোয়ান। যারা অভিবাবক তাদের দারোয়ান, তাদেরকে পাহাড়া দেয়া সাংবাদিকের দায়িত্ব। সুতরাং দায়িত্বশীল কোন ব্যক্তি যখন কোন ভুল করে তখন তা শুধরে দেয়া বা ভুল দেখিয়ে দেয়া সাংবাদিকের প্রধান কাজ। আর এই কাজটি করতে গিয়ে নীতিভ্রষ্ট হলে এই সমাজ কখনোই শুধরাবেনা।

সাংবাদিক কি করতে পারেন: একজন সাংবাদিক তাঁর নীতিতে অটল থাকতে পারেন। নীতি ধরে রাখার জন্য সকল লোভনীয় অফার বিসর্জন দিতে পারেন। তাঁর কাছে একজন নিকট আত্মীয় আর একজন অপরিচিত ব্যক্তি একই সমান। তিনি সবাইকে সমান চোখে দেখতে পারেন। যদি এই গুনটি থাকে তাহলে তিনি সমাজের সকল অনিয়ম অসংগতি তুলে ধরতে পারেন। মানুষরূপি অমানুষের অপকর্মগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরতে পারেন। ফলে একটি সুন্দর বাসযোগ্য সমাজে আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারবে।
সাংবাদিক কি করতে পারেন না: কোনকিছুর বিনিময়ে নিজের বিবেক বিক্রি করতে পারবে না। কোন বিশেষ সুবিধা আদায়ের ব্রত নিয়ে কেউ সাংবাদিকতায় আসবে না। একমাত্র সেবার মনমানসিকতা থাকলেই সাংবাদিকতার মতো মহান পেশায় আসতে পারেন। এমন কিছু সংবাদ থাকে যা সত্য হলেও প্রচার করা উচিৎ নয়। যেমন যেসব সংবাদ প্রচারে দেশের স্বাাধীনতা, সার্ভভৌমত্ব, রাষ্ট্রিয় ভূখন্ডের ক্ষতি হতে পারে, আন্তর্জাতিক অঙ্গণে নিজ দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হতে পারে অথবা সংবাদের কারনে অন্যকোন দেশের সাথে যুদ্ধ লেগে যেতে পারে এমন সংবাদ প্রচার করা উচিৎ নয়। আবার এমন কিছু সংবাদ আছে যা প্রচারের ফলে দাঙ্গা হাঙ্গামার সৃষ্টি হতে পারে, সমাজে অশান্তি সৃষ্টি হয়, জনস্বার্থ বিঘ্নিত হয় এমন সংবাদ প্রচার করা থেকে বিরত থাকা উচিৎ। এমন কিছু সংবাদ থাকে ঘটনা সত্য কিন্তু এমন সংবাদ প্রচারের ফলে অপরাধ প্রবনতা বাড়তে পারে, দেশের বেশিরভাগ মানুষ বিপদের সম্মুখীন হতে পারে অথবা গৃহযুদ্ধ লেগে যেতে পারে এমন সংবাদ প্রকাশ করা উচিৎ নয়।
নির্ভিক সাংবাদিকতার প্রতিবন্ধকতা কোথায়: সমাজের কতিপয় কথিত প্রভাবশালী, সরকারি/বেসরকারি গুটিকয়েক অতিলোভী সিন্ডিকেটের কবলে পড়ে সাংবাদিকতা মূল নীতি থেকে সরে যাচ্ছে। একশ্রেণির পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক রয়েছেন যারা সামান্য বিজ্ঞাপণের কাছে সাংবাদিকতার মতো মহান পেশাকে বিকিয়ে দিচ্ছেন। তারা সত্য কথাটি বলতে পারছেন না। আবার কিছু প্রভাবশালীরা সাংবাদিক পুষে থাকেন, তারা নিজেদের স্বার্থে যথেচ্ছা ব্যবহার করে থাকেন। অবৈতনিক নিয়োগবিধি নির্ভিক সাংবাদিকতার প্রধান অন্তরায়। এর ফলে একদিকে পরিচয়পত্র বেঁচাকেনা অন্যদিকে বেপরোয়া চাঁদাবাজির ফলে সাংবাদিকতা পেশাটাই কলুষিত হচ্ছে সর্বত্র।
সাংবাদিকের শত্রু কে: সাংবাদিকতা শুরু বা পেশায় আসার আগে আমাদের জানতে হবে সাংবাদিকের শত্রু কে ? আমি অকপটেই বলতে পারি সাংবাদিকের শত্রু সাংবাদিক। কাক কাকের মাংস না খেলেও এক সাংবাদিক আরেক সাংবাদিকের মাংস খায় অর্থাৎ বাঁশ দেয়। হউক সে হলুদ, সাদা বা লাল কালো যেকোন ধরনের। কিন্তু এই সাংবাদিকরাই সাংবাদিকের পেছনে লেগে থাকে। অণ্য পেশার লোকেরা সাংবাদিকের পেছনে লাগেনা, কৌশলে সাংবাদিককে লাগিয়ে দেয়। আমার ২৫ বছরের সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতায় অনেক সাংবাদিক আমার অনুসন্ধানি নিউজ প্রকাশ না করার জন্য তদবীর করেছেন। তাদের কথা শুনলে আমি খুব ভালো কিন্তু যখন শুনতে পারবো না তখন আমিই হই তাদের কাছে খুব খারাপ মানুষ। কিন্তু এভাবে যদি আমরা কারো কথায় কাউকে ছাড় দেই তাহলে আমাদের সাংবাদিকতা কোথায়? আমার জানামতে এমন অনেক ঘটনা আছে, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা হামলা করা হয়েছে, এর পেছনে রয়েছে সাংবাদিকদের আরেকটি অংশ। সাংবাদিকদেরও রয়েছে একাধিক গ্রুপ, উপগ্রুপ। এসব গ্রুপিং এর ফলে সাংবাদিকতা আজ রাস্তায় রাস্তায় মার খেয়ে মূখ থুবরে পড়ছে। যদি প্রকৃত সাংবাদিকের সংখ্যা বাড়তো, সাংবাদিকতার চর্চা হতো তাহলে কখনোই এই পরিস্থিতি হতোনা। সাংবাদিক নীতি ভ্রষ্ট না হলে সমাজ থেকে সকল অনিয়ম পালিয়ে যেতো।


(লেখক: সাংবাদিক মোঃ রাব্বী মোল্লা)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Share post:

spot_imgspot_img

Popular

More like this
Related

সংবাদকর্মীদের নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রাখার আহ্বান-মনজুর হোসেন

বিএনএসঃ সাংবাদিকতা পেশাকে বিশ্বাসযোগ্য ও জনবান্ধব রাখার লক্ষ্যে সংবাদকর্মীদের নিরপেক্ষতা...

E-Paper

জেএসএস’র ঈদ পুনর্মিলনীতে অংশ নেবেন মুহম্মদ মনজুর হোসেন

মোঃআনজার শাহ জাতীয় সাংবাদিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা বিশিষ্ট সাংবাদিক মুহম্মদ আলতাফ...

নানা আয়োজনে বার্তা প্রবাহর ২১ বছরে পদার্পণ দিবস উদযাপিত

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে ০১ জুলাই ২০২৫ (মঙ্গলবার)...