বিএনএসঃ
স্বাধীন গণমাধ্যম: গণতন্ত্রের নিঃশ্বাস বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস ২০২৫
প্রতিবছর ৩ মে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস। দিনটি গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, মতপ্রকাশের অধিকার ও তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার রক্ষার প্রতীক। ১৯৯৩ সালে ইউনেস্কোর আহ্বানে এবং জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ঘোষণা অনুযায়ী, এই দিনটি প্রথমবারের মতো পালন করা হয়, যার মূল উদ্দেশ্য হলো বিশ্বব্যাপী সাংবাদিকদের নিরাপত্তা এবং গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা।
একটি রাষ্ট্রের গণতন্ত্র তখনই পরিপূর্ণ হয়, যখন তার গণমাধ্যম মুক্ত, নিরপেক্ষ ও শক্তিশালী। সাংবাদিকরা যখন নির্ভয়ে সত্য প্রকাশ করতে পারেন, তখনই রাষ্ট্র ও সমাজের অন্যায়, দুর্নীতি ও অনিয়ম উন্মোচিত হয়। গণমাধ্যম কেবল সংবাদ প্রচারের মাধ্যম নয়, এটি জনগণের কণ্ঠস্বর, সরকারের নীতি নির্ধারণে এক ধরণের সামাজিক আয়না।
তবে দুঃখজনক বাস্তবতা হলো—বিশ্বের বহু দেশে এখনো সাংবাদিকরা নিপীড়নের শিকার। কোথাও কারাবরণ, কোথাও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে কেবল সত্য প্রকাশের কারণে। ডিজিটাল যুগে এই হুমকি আরও জটিল রূপ নিয়েছে। সাইবার নজরদারি, ভুয়া তথ্য, অনলাইন হুমকি—এসবই আজকের সাংবাদিকতার নতুন চ্যালেঞ্জ।
২০২৫ সালের বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসের প্রতিপাদ্য, “গণমাধ্যম স্বাধীনতা ও ডিজিটাল নিরাপত্তা: তথ্যের নতুন চ্যালেঞ্জ”, বিশেষভাবে প্রাসঙ্গিক। বর্তমান বিশ্বে যেখানে প্রযুক্তি যেমন স্বাধীনতা দিয়েছে, তেমনি দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারির হাতিয়ার, সেখানে তথ্যের অবাধ প্রবাহ ও নিরাপত্তা একই সঙ্গে নিশ্চিত করাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
এই দিনে আমাদের মনে রাখতে হবে—মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কোনো অনুগ্রহ নয়, এটি একটি মৌলিক অধিকার। একটি সমাজ যত বেশি তথ্যের ওপরে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করে, তত বেশি তা গণতন্ত্র থেকে দূরে সরে যায়। সাংবাদিকদের নিরাপত্তা, নীতিনিষ্ঠ গণমাধ্যম এবং তথ্যের স্বাধীনতাই পারে একটি সজাগ ও মানবিক সমাজ গড়ে তুলতে।
উপসংহার:
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস কেবল একটি প্রতীকী উদযাপন নয়; এটি একটি সুযোগ—আমাদের নিজেদের প্রশ্ন করার, আমরা কতটা মুক্তভাবে সত্য প্রকাশ করতে পারি? রাষ্ট্র, সমাজ ও প্রতিটি নাগরিকের উচিত, এমন একটি পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে কেউ যেন সত্য বলার কারণে ভয় না পায়। কারণ, যেখানে গণমাধ্যম স্বাধীন, সেখানেই গণতন্ত্র নিঃশ্বাস নিতে পারে।
লেখকঃ মুহম্মদ মনজুর হোসেন (সাংবাদিক) চেয়ারম্যান, বাংলাদেশ নিউজ সিন্ডিকেট-BNS